রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:২০ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
স্বেচ্ছাসেবক লীগের র‌্যালি থেকে ফেরার পথে ছুরিকাঘাতে কিশোর নিহত দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চরম তাপপ্রবাহ আসন্ন বিপদের ইঙ্গিত দ্বিতীয় ধাপে কোটিপতি প্রার্থী বেড়েছে ৩ গুণ, ঋণগ্রস্ত এক-চতুর্থাংশ: টিআইবি সাড়ে ৪ কোটি টাকার স্বর্ণসহ গ্রেপ্তার শহীদ ২ দিনের রিমান্ডে ‘গ্লোবাল ডিসরাপ্টর্স’ তালিকায় দীপিকা, স্ত্রীর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত রণবীর খরচ বাঁচাতে গিয়ে দেশের ক্ষতি করবেন না: প্রধানমন্ত্রী জেরুসালেম-রিয়াদের মধ্যে স্বাভাবিককরণ চুক্তির মধ্যস্থতায় সৌদি বাইডেনের সহযোগী ‘ইসরাইলকে ফিলিস্তিন থেকে বের করে দাও’ এসএমই মেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ইরান ২ সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র বানাতে পারবে!
সুন্দরবনে পাতামরা রোগ, উজাড়ের শঙ্কায় গোলবন

সুন্দরবনে পাতামরা রোগ, উজাড়ের শঙ্কায় গোলবন

স্বদেশ ডেস্ক:

সুন্দরবনে পাতামরা রোগে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গোলপাতা। এতে অভয়ারণ্যসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার মণ পাতা পচে যাচ্ছে। এতে গোল গাছের নতুন অঙ্কুরোদগম ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে বন সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। তবে গোলপাতার নতুন নতুন কুপও (ক্ষেত্র) বৃদ্ধি পাবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন।

সুন্দরবন ঘুরে দেখা গেছে, যেসব স্থানে গোলপাতার কুপ রয়েছে সেসব স্থানে গোল গাছের পাতা মরে যাচ্ছে। এক জায়গায় অধিক ঘন বন হওয়ার কারণে এসব গাছের পাতার এমন অবস্থা। কোনো কোনো গাছে মাইজ পাতা (মাঝখানের শিশু পাতা) বাদে সব পাতাই নষ্ট হয়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে বন বিভাগের কর্মকর্তা ও বাওয়ালিরা বলছেন, পাতা না কাটার কারণেই নষ্ট হচ্ছে। এতে গাছের ফল প্রদানের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। এক সময় এসব কুপ নষ্ট হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন তারা।
বাওয়ালি ইসমাইল হোসেন বলেন, আগে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল বনজীবীরা সারা বছর কিছু না কিছু আয় করতে পারতেন। এখন সেই সুযোগ সঙ্কুচিত হওয়ার কারণে শিকারির সংখ্যা বেড়েছে। ফলে গত কয়েক বছরে যে পরিমাণ হরিণ শিকারি ধরা পড়েছে অতীতে তত ছিল না।

সুন্দরবন বনজীবী ব্যবসায়ী ফেডারেশনের সভাপতি মীর কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, এক সময় সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জেই শুধু তিনটি কুপ থেকে গোলপাতা আহরণ করা হতো। বর্তমানে একটি কুপ থেকে গোলপাতা কাটা হয়। বাকি কুপগুলোতে গোলপাতার বংশ বিস্তার কমেছে। পাতা মরে যাচ্ছে। গাছ পরিষ্কার না করার কারণে ফল দেয়ার পরিমাণও কমেছে। ফলে এক সময় এসব গাছ মরে যাবে। তখন গাছের অঙ্কুরোদগমও হবে না। তিনি বলেন, গোলগাছ নারকেল, খেজুর, তাল ও কলা জাতীয় গাছের মত। ঝোড়া (পরিষ্কার করা) না হলে ফল দেয়ার পরিমাণ কমে যায়। সুন্দরবনে গোলগাছের ক্ষেত্রটাও একই রকমের। উপকূলের মানুষের মধ্যে গোলপাতার ব্যবহার কমছে। পাতার জোগান না থাকায় মানুষ টিনের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। অন্য দিকে এক সময় বারো মাসই গোলপাতা আহরণ করা যেত। তখন কিন্তু গোলগাছ বাড়ত। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এসব কুপ নষ্ট হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, বন বিভাগের তদারকি বাড়লে বাওয়ালিরা গোল গাছের শুধুই পাতাই কাটবে না সাথে সাথে গাছ পরিষ্কার করে দেবে। তখন গাছের পাতা উৎপাদনের সক্ষমতাও বাড়বে।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগীয় অফিস সূত্র জানিয়েছে, এ বিভাগের আওতায় এখন মাত্র দু’টি কুপ থেকে চলে গোলপাতা আহরণ। আগে এ বিভাগ থেকে আড়– শিবসা, শিবসা ও ভদ্রা এবং সাতক্ষীরা রেঞ্জের সাতক্ষীরা কুপ থেকে গোলপাতা আহরণ করা হতো। বর্তমানে তিনটি স্থানই অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে বর্তমানে এসব কুপ থেকে আর গোলপাতা আহরণ করা হয় না। যে কারণে গাছ পরিষ্কার না করায় মরা পাতার পরিমাণ বাড়ছে।

সূত্র জানিয়েছে, আগে প্রায় এক হাজার বাওয়ালি গোলপাতা আহরণ করতেন। এখন তা কমে আড়াই শ’তে নেমেছে। গোলগাছের পাতামরা রোগের বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, ফুল ও ফলের জন্য গোলগাছ পরিষ্কার করা জরুরি। না হলে নষ্ট হয়ে যাবে। পাতা না থাকলে গাছের বৃদ্ধি পাওয়ার হারও কমে যাবে। বাওয়ালিদের নির্দেশনাই থাকে যে পাতা কাটার সাথে সাথে গাছ পরিষ্কার করে দিতে হবে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা হয় না। তারা কোনো রকমে পাতা কেটে নিয়ে চলে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে তাদের তীক্ষè ধারালো দায়ের আঘাতেও মাইজ পাতা বা ফলের ক্ষতি হয়। সে ক্ষেত্রে ওই গাছ আর ফল উৎপাদন করতে পারে না। এ জন্য উচিত হবেÑ বন বিভাগের কর্মকর্তারা বাওয়ালিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তবেই পাঠাবেন। তাহলে পাতা কাটলে অসুবিধা হবে না। তিনি বলেন, সুন্দরবনের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে এক জায়গায় নষ্ট হলে অন্য জায়গায় বৃদ্ধি পাবে।

এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন বলেন, কিছু গোলপাতা ঝড়ের কারণে বা অন্য কারণে নষ্ট হতে পারে। পাতা কাটলে পাতা বাড়ে এ কথা ঠিক তবে এখন গোলপাতার চাহিদা বাইরে কম। এক সময় ১০ লাখ টন পাতা আহরণ করা হতো। এখন তা কমে দুই লাখ টনে নেমেছে। যে কারণে অনুমতিও কম দেয়া হয়। তিনি বলেন, সুন্দরবনের কোনো গাছ মানুষ লাগায়নি। ফলে এ বনের গাছও নিজস্ব নিয়মেই তার বিস্তার বৃদ্ধি করবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877